আগামি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে যেই জিতুন না কেন দুজনেই ইতোমধ্যে নতুন ইতিহাস গড়ে রেখেছেন। ট্রাম্পের জন্য এ নির্বাচন হচ্ছে মসনদে ফেরার লড়াই। অপরদিকে হ্যারিস জিতলে হবেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের উৎসুক চোখের সামনে ৫ নভেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনমত জরিপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আনাচে কানাচে এখন চলছে দুজনের ধুন্ধুমার লড়াই, যার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অগুণতি মানুষ।
ট্রাম্প জিতলে কি হবে:
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি। ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার চার বছর পর আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। এবারের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কেবল দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি টানা জিততে না পেরেও এ কৃতিত্ব দেখাবেন। এর আগে উনবিংশ শতকের শেষের দিকে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এ নজির গড়েছিলেন। ক্লিভল্যান্ড টানা জিততে না পারলেও ১৮৮৫-১৮৮৯ ও ১৮৯৩-১৮৯৭ সালে দুই-মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার সুদীর্ঘ রাজনীতিতে অসঙ্গতি হলেও এমনটা ঘটেছিল। ট্রাম্প এক শতাব্দী পরে এই বিরল ঘটনাটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন কিনা তা দেখার জন্য আরো দিনকয়েক অপেক্ষায় থাকতে হবে।
অবিচ্ছিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পার্থক্যের বাইরে, ট্রাম্প ফিরে আসতে পারলে একটি অসাধারণ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের উদাহরন হবেন তিনি। ২০২০ সালে পুনঃনির্বাচনে হেরে যাওয়া, একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া ট্রাম্প জিততে পারলে রিপাবলিকান পার্টি এবং তার মূল সমর্থকদের প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পদের সুবাদে দেশটির পাশাপাশি সারা দুনিয়ায় প্রভাব খাটানোর সুযোগ পাবেন। যদিও তিনি আদতে রিপাবলিকানই ছিলেন না। এমনকি আমেরিকার রাজনীতিতেও কিছুটা বহিরাগত হিসেবেই বিবেচিত হন।
কমলা হ্যারিস জিতলে কি হবে:
ব্যালটে কমলা হ্যারিসের বিজয় একটি ভিন্ন মাত্রার ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করবে। ইতিমধ্যেই ২০২১ সালে জো বাইডেনের জয়ের সুবাদে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা, ভারতীয় আমেরিকান এবং দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইতিহাস গড়েছেন। হ্যারিসেরে আরেকটি জয় মানে নারীদের জন্য নতুন ও অনন্য এক ইতিহাস গড়া। কেননা একটি জয় তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে কাজ করা প্রথম নারীর সম্মান এনে দেবে। ২০১৬ সালে যে মাইলফলকের কাছাকাছি গিয়েও বিফল হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন।
ক্লিনটন যা করতে পারেননি, হ্যারিস শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বিশ্বব্যাপী নারী ও সংখ্যালঘু নেতাদের জন্য আলোর দিশা হয়ে উঠবেন। অগ্রগতির একটি বিশ্বব্যাপী প্রতীক হয়ে উঠবেন, যা শুধুমাত্র লিঙ্গ সমতাই নয় বরং বর্ণ বৈষম্যের কবলে থাকা মানুষদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। ভারতীয় এবং জ্যামাইকান অভিবাসীর সন্তান হিসাবে, প্রেসিডেন্ট পদে তার আরোহণ বিশ্বজুড়ে প্রান্তিক সম্প্রদায়কে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত ও বিকশিত অর্থনীতির কারণে সারা পৃথিবীর মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের কাছে পরবর্তী প্রজন্মের অভিবাসীরা যথেষ্ঠ মূল্য পায় না। কমলা হ্যারিসের সম্ভাব্য জয় এই মানুষদের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। যদিও অর্থনৈতিক বিবেচনায় তিনিও সেদেশের অভিজাতদেরই প্রতিনিধি। অন্য কিছু নন।
ইতিহাস ইতিমধ্যে তৈরি
ফলাফল যাই হোক না কেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার সম্ভাবনার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা এবং হ্যারিসের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রয়াস এই নির্বাচনকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে।
ট্রাম্পের জন্য, একটি জয় রাজনৈতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্ষম একজন দৃঢ ব্যক্তিত্ব হিসাবে তার মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করবে। হ্যারিসের জন্য, একটি বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে নারী এবং সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ পদে আরোহণের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামকে আলাদা মাত্র দিয়েছে। হিলারি ক্লিনটন সহ — অনেকেই আগে যার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। শেষ পরযন্ত ফলাফল যাই হোক ট্রাম্প ও হ্যারিস ইতিহাসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে ফেলেছেন এরই মধ্যে।