১৬২ বছরে কতটা এগোল রেল যোগাযোগ ?

0
49

আজ শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪। বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ এর ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা ১৬২ বছর আগে এ দিনে বাংলাদেশ নামের ভুখন্ডটিতে রেল যোগাযোগ চালু হয়েছিল। তারপর থেকে ইতিহাসের পরিক্রমায় এখন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানায় পরিচালিত বাংলদেশ রেলওয়ের আছে মোট ২৯৫৫.৫৩ কিলোমিটার রেলপথ।

সারা পৃথিবীতেই রেলপথ মানুষের সহজ যোগাযোগের অন্যতম ও আরামদায়ক এক মাধ্যম। কিন্তু দুনিয়ার কথা বাদ, পড়শি ভারতেও রেল যে সেবা দিচ্ছে মানুষকে তার ধারে কাছে নেই বাংলাদেশ রেলওয়ে। বছর বছর বিপুল ব্যয় বরাদ্দের পরও এটি একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান। তাও যদি মানুষ ঠিকমতো সেবা পেতো, তাহলে কথা ছিল না। 

বৃটিশরা ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর‌্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য এ রেললাইনটি চালু করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ছোট ছোট রেলপথ চালু করতে থাকে। মুলত বৃটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে সামনে রেখেই তারা রেল যোগাযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। দর্শনা থেকে জগতির লাইনটি বসায় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক এক কোম্পানি।

অবিভক্ত ভারতে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চলেছিল ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল। তখন ভারতে ইংল্যান্ডের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন লর্ড ডালহৌসী। প্রায় ১৭১ বছর আগে ভারতের বোম্বের (এখনকার মুম্বাই) বঢ়ি বন্দর থেকে থানে পর্যন্ত চলেছিল ট্রেনটি। ৪০০ যাত্রী ছিল প্রথম যাত্রায়। বাংলায় প্রথম রেল চালু হয়েছিল এর পরের বছর, হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত। বাংলাদেশের তখনকার এ অঞ্চল রেলযুগে প্রবেশ করে তারও আট বছর পর।

অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের আইনের আলোকে ১৮৪৪ সালে ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড হেনরি হার্ডিঞ্জ বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপন করার অনুমতি দেন। কিন্তু এতে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা তখনই খুব একটা আকৃষ্ট হয়নি। শেষ পযন্ত ডালহৌসির সময়ে রেল বাস্তবতার মুখ দেখে।

বৃটিশরা অবশ্য নিজেদের দেশে রেল চালু করে আরো আগে, ১৮২৫ সালে। এটিই বিশ্বের প্রথম রেলপথ। সেও এক বিশাল কাহিনী।

ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেলে কয়লা খনির এক শ্রমিক ভাবেন লাইনের উপর দিয়ে যে ট্রলিগুলোকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়, তা যদি যন্ত্র শক্তি দিয়ে করা যায় তাহলে মানুষ ও ঘোড়ার কষ্ট লাঘব হবে। এই শ্রমিকের নাম জর্জ স্টিফেনসন। তিনি এই ভাবনা মাথায় আসার পর থেকেই নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটা যন্ত্র বানাতে উঠে পড়ে লাগেন। ১৮১৪ সালে সাফল্যের দেখা পান তিনি। কয়লার ট্রলিগুলোর মাথায় বাষ্প ইঞ্জিন লাগিয়ে একটা ট্রেন বানিয়ে ফেলেন তিনি।

জর্জ স্টিফেনসন ১৮১৯ সালে নিজ উদ্যোগে সান্ডারল্যান্ডে আট মাইল দীর্ঘ রেললাইন বসান। সে বছরই প্রথম যন্ত্র নির্ভর রেল যাত্রা শুরু হয়। এটা ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় পুরো ইংল্যান্ডে। শিল্প উদ্যোক্তারা স্টিফেনসনের পেছনে টাকা ঢালতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। স্টিফেনসনও রাতারাতি ইংল্যান্ডের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। অবশেষে এদের অর্থায়নে ১৮২১ থেকে ১৮২৫ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের স্টকটন থেকে ডার্লিংটন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক রেললাইন স্থাপন করেন স্টিফেনসন। ১৮২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্টকসন থেকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন ছাড়ে।

ব্রিটিশ সরকার তাকে লিভারপুল থেকেম্যাঞ্চেস্টার পর্যন্ত রেল লাইন বসানোর কাজ দেয়। ১৮৩০ সালে সফলভাবে শহর দুটির মধ্যে রেল যোগাযোগ চালু হয়। আর দর্শনা থেকে জগতির লাইনটি বসায় যে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক কোম্পানি, সেটি ছিল এই স্টিফেনসনের ভাতিজা রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিফেনসন।

এবার আসা যাক বাংলাদেশ রেলওয়ের কথায়। সংস্থাটি একে তো লোকসানি, তারওপর ট্রেনের টিকিট কাটার পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ভোগান্তির যেন শেষ নেই। অতি সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে কিছু পরিবর্তন আনা এবং সুবিধা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ রাজধানী ঢাকার রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের রুট রেশনালাইজেশন এবং ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে পরিবর্তনের কথা জানান তিনি।

ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে রেলে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা এবং লোকসান হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। তার মানে রেলকে প্রতিবছর গড়ে লোকসান গুনতে হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে রেলের আয়ের চেয়ে ব্যয় আড়াই গুণেরও বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here