যুক্তরাষ্ট্রে নারী প্রেসিডেন্ট, এখনো স্বপ্নই

0
60
WASHINGTON, DC - JULY 22: U.S. Vice President Kamala Harris attends an NCAA championship teams celebration on the South Lawn of the White House on July 22, 2024 in Washington, DC. U.S. President Joe Biden abandoned his campaign for a second term after weeks of pressure from fellow Democrats to withdraw and just months ahead of the November election, throwing his support behind Harris. (Photo by Andrew Harnik/Getty Images)

বিশ্বের বহু দেশে নারীরা প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পদে যেতে পারছেন না সেদেশের কোন নারী। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের হারে বিশ্বের সবচাইতে বড় মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রে কোন নারীর প্রেসিডেন্ট হওয়া এখনো স্বপ্ন হয়েই থাকলো।

অথচ ২০২১ সালে জো বাইডেনের জয়ের সুবাদে কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা, ভারতীয় আমেরিকান এবং দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইতিহাস গড়েছিলেন। হ্যারিসের আরেকটি জয়ের মানে হতো সেদেশের নারীদের জন্য নতুন ও অনন্য এক ইতিহাস গড়ার ঘটনা। কেননা ৫ নভেম্বর ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি হতেন সেদেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালে যে মাইলফলকের কাছাকাছি গিয়েও বিফল হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সে চেষ্টা ভেস্তে দিলেন। মজার ব্যাপার হলো এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের দুটো জয়ই এলো নারী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে। তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট।

ক্লিনটন যা করতে পারেননি, হ্যারিস শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বিশ্বব্যাপী নারী ও সংখ্যালঘু নেতাদের জন্য আলোর দিশা হয়ে উঠতে পারতেন আরেকটি জয়ে। শুধুমাত্র লিঙ্গ সমতাই নয় বরং বর্ণ বৈষম্যের কবলে থাকা মানুষদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন তিনি। ভারতীয় এবং জ্যামাইকান অভিবাসীর সন্তান হিসাবে, প্রেসিডেন্ট পদে তার আরোহণ বিশ্বজুড়ে প্রান্তিক সম্প্রদায়কে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারতো।

অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত ও বিকশিত অর্থনীতির কারণে সারা পৃথিবীর মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের কাছে পরবর্তী প্রজন্মের অভিবাসীরা যথেষ্ঠ মূল্য পায় না। যদিও অর্থনৈতিক বিবেচনায় তিনিও সেদেশের অভিজাতদেরই প্রতিনিধি। অন্য কিছু নন। এখন কমলা হ্যারিসের এই হার জানান দিল শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাধিক্যের মার্কিন মুল্লুকে নারীরাও এখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাদের বিবেচনায় আসতে পারছেন না।

কমলা হ্যারিসের হারের অন্যতম কারণ শুধু নারী প্রার্থী হওয়াই নয়। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু একটা বড় পারমানবিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি, তাই নারীরা দৃঢ়তার সাথে দক্ষতা দেখানোর ক্ষমতা রাখেন কিনা, এ প্রশ্নটা নির্বাচন এলেই বারবার ওঠে। ট্রাম্প নিজেও বারবার এ প্রশ্ন তুলেছেন। হিলারির সময় থেকেই নারী নেতৃত্বের বিষয়টিকে অশ্লীলভাবে হেয় করেছেন। অবশ্য দৃশ্যপটে ট্রাম্পের আসার অনেক আগে এ প্রশ্ন ওঠে যখন জেরালডিন ফেরারো ১৯৮৪ সালে একটা বড় দলের হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম নারী প্রার্থী হন।

ফেরারো ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কাজ করেন। কিন্তু ওয়াল্টার মন্ডেলের সাথে চুরাশির নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেও দুজনেরই হার হয় প্রথমে রোনাল্ড রিগান ও জর্জ বুশ জুটির কাছে। অবশ্য ফেরারো, হিলারি কিংবা কমলার হার শুধু নারী হিসেবেই নয়। তাদের হারের পেছনে রাজনৈতিক দায়ও আছে।

কিন্তু মোটা দাগে বলা যায় নারীরা প্রার্থী হলেই তাদের সক্ষমতার প্রশ্ন ওঠে। হিলারির নিজেরও যোগ্যতার ঘাটতি ছিল না। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার আগে সিনেটর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন তিনি। তারপরও নির্বাচনে দাড়ানোর পর অন্য অনেক কিছুর সাথে তার বেশভূষা এমনকি গলার স্বর নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তিনি। হিলারি নিজেকে নারী প্রার্থী হিসেবে জোরালো ভাবে তুলে ধরেও ব্যর্থ হন। আবার এ প্রেক্ষিতটিতে জোর না দিয়েই প্রচার চালান কমলা হ্যারিস।

কিন্তু মানুষ এখনো প্রচলিত ধারণার বাইরে যেতে চায় না। তার প্রমাণ হিলারির নির্বাচনের সময় প্রশ্ন উঠেছিল মনিকা লিউনেস্কির সাথে ফস্টিনস্টির পরও কেন তিনি স্বামী বিল ক্লিন্টনের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। সেসময় অনেক বোদ্ধা বলেছিলেন এ কারণে নাকি আমেরিকায় অনেক নারীই হিলারিকে ভোট দেননি। যদিও মোট ভোটে ট্রাম্পের চাইতে বেশিই পেয়েছিলেন হিলারি।

কমলা হ্যারিসের অবশ্য এসব বিতর্ক ছিল না।

কিন্তু এখন হারের পর বলা হচ্ছে কমলা দেরি করে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাসুল দিলেন। সত্য বটে তিনি প্রাইমারিতে অংশ নেননি। বাইডেনের অবস্থা বেগতিক দেখার পর ডেমোক্রেটিক পার্টি পড়িমড়ি করে ভোটের ১০০ দিন বাকি থাকতে ট্রাম্পের সাথে লড়াইয়ে যোগ দেন। এমনকি বাইডেন যেখানে জনমত জরিপে পিছিয়ে ছিলেন, সেখানে কমলা অন্তত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালান ভোটের আগ পর্যন্ত।

আবার কারো কারো মত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জো বাইডেনের অর্থনৈতিক নীতির দায় থেকে নিজেকে বাচাতে পারেননি। আমেরিকার কর্মজীবি শ্রেণীও তাকে আলাদা করে ভাবেননি। তাই যুক্তরাষ্ট্রে ‘কাচের ছাদ’ ভেঙে হোয়াইট হাউজে এক অ-শ্বেতাঙ্গ নারীর দেখা মিললো না।

অবশ্য দুনিয়ার অন্যত্রও যে নারীরা খুব বেশি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আছেন, তা নয়। এ মুহুর্তে সারা দুনিয়ায় নারী প্রেসিডেন্ট কেবল দুজন। এরা হলেন মেক্সিকোর ক্লডিয়া শিনবাউম যিনি কেবল এ বছরের অক্টোবরে শপথ নেন। অপরজন হলেন হন্ডুরাসের জিওমারা কাস্ত্রো। পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী জাতিসংঘের ১৯৩ দেশের মধ্যে সরকার প্রধান হিসেবে আছেন কেবল ১৩জন।

এর মধ্যে আবার মেক্সিকোসহ নয়টি দেশের সরকার প্রধানরা হলেন প্রথমবারের মতো নির্বাচিত নারী। অপর দেশগুলো হলো-বারবাডোস, মার্শাল আইল্যান্ড, তানজানিয়া, সামোয়া, হন্ডুরাস, ইতালি, পেরু, বসনিয়া ও হারজেগোভিনা। নারী নেতৃত্বে থাকা অপর চার দেশ হলো- থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, লাটভিয়া ও ডেনমার্ক। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের হিসাবে অবশ্য এখন অবধি জাতিসংঘের ৬০টি দেশ কখনো না কখনো নারী নেতৃত্ব পেয়েছে।

এক্ষেত্রে ইতিহাসে সবার আগে নাম লেখান শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে। তিনি ১৯৬০ সালে সরকার প্রধান হন। সেসময় অবশ্য শ্রীলঙ্কার নাম ছিল সিলোন। এরপর ওই দশকেই ভারত (১৯৬৬) ও ইসরাইলে (১৯৬৯) দুজন নারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে এসব নারীরাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের সুবাদে বড় বড় পদে গেছেন। কাজেই সেখানেও নারীদের অর্জনগুলোর স্বকীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here