এল ক্ল্যাসিকো: একের ভেতর দুই লড়াই

0
51

ফুটবলে বিশ্বকাপের পরেই সবচেয়ে আকর্ষনীয় জায়গা হলো ইউরোপের লিগগুলো। একটা সময় ইংলিশ ও স্পানিশ লিগের পাশাপাশি ইতালির ফুটবলও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন ইংল্যান্ড ও স্পেনই মুলত বিশ্বের ক্লাব ফুটবলের প্রধান তীর্থ। তার মধ্যেই সবাইকে ছাড়িয়ে অবস্থান স্পেনের এল ক্ল্যাসিকো, ক্লাব ফুটবলের হিসেবে সবচাইতে বড় ম্যাচ। তবে মহাদেশীয় ফুটবল সমর্থকদের কাছে এ লড়াই বেশি জনপ্রিয় ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির কারণে। দুজনেই অবশ্য কয়েক বছর হলো স্পেন ছেড়ে গেছেন।

কারণ এ দুটি লিগেই মারকাটারি উত্তেজনার দেখা মেলে। তার মধ্যে একমাত্র স্পেনেই বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার এল ক্ল্যাসিকোর সুবাদে উত্তেজনার ফুটবলীয় সুখ খুজে পাওয়া যায়। কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এ খেলায় জয় বা ড্র পেলেই লা লিগায় কোন ক্লাবের দীর্ঘ সময় অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি ছুয়ে ফেলবে।

মজার ব্যাপার হলো সে রেকর্ডটি আবার এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার দখলে।  ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৪৩টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার সুবাদে তারা এ রেকর্ডটি গড়েছিল। অবশ্য ইউরোপের লিগগুলোর হিসাব বিবেচনায় নিলে জার্মানিতে বায়ার্ন মিউনিখের দখলে আছে সবচেয়ে বেশি ৫৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি।

স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ হেরেছে ১৩ মাস এবং ৪২ ম্যাচ আগে। রিয়াল মাদ্রিদের ওই হারটি ছিল ২০০৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে। একই শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে তারা ৩-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল। তারপর থেকে রিয়াল ৩১টি জয়, ১১টি  ড্রয়ের বিপরীতে কোন হারের নজির গড়েনি। এই জয়যাত্রার মধ্যেই আছে গেল মৌসুমে ১০ পয়েন্টে  এগিয়ে থেকে পাওয়া লা লিগার শিরোপার জয়।

রিয়াল এই সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও অপরাজিত থেকেছিল। ইউরোপের ক্লাব সেরার এই প্রতিযোগিতায় তারা ফাইনাল জিতেছিল জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে। উরুগুয়ের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দে ছিলেন এরকম দুর্দান্তপনার নেপথ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

ফেদেরিকো এক ম্যাচ ছাড়া বাকি সবগুলোতেই খেলেছেন। এছাড়া অবদান আছে ব্রাজিলিয় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের। তিনতিনি ১৯ গোল করেন। লা লিগায় তার চাইতে বেশি গোল কেউ করতে পারেনি। ইংল্যান্ডের  মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম ১৪ গোল করে ছিলেন ঠিক তার পেছনেই।

বার্সেলোনাকে তাদের রেকর্ডটি ধরে রাখতে হলে আজ শনিবার রাতে রিয়ালকে হারাতেই হবে। বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের দল ভাল ফর্মেই আছে। বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই কোচ চলতি বছরেই স্পেনের ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় এরই মধ্যে তিনি ক্লাবটিকে আক্রমনাত্নক ফুটবল খেলিয়ে সমর্থক ও সমালোচকদের মন জিতেছেন। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানির কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর কর্মহীন ছিলেন ৫৯ বছরের ফ্লিক।  

কাজেই ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে জিতে ও ২০১৮  সালের মে মাসে লেভান্তের কাছে  ৫-৪ গোলে হেরে যাওয়ার আগে যে রেকর্ড গড়েছিল দলটি, তা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই চালাবে বার্সেলোনা। ছয় বছর আগে বার্সেলোনার এ দুর্দান্তপনায় অবদান ছিল তাদের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির। ৪৩ খেলার এই জয়যাত্রায় ৫৮টি গোল করেছিলেন মেসি। সে তুলনায় রিয়ালের বর্তমান চেষ্টায় ভিনিসিয়াস ও বেলিংহাম এখন পর্যন্ত  ৪৮ গোল করেছেন।

দুদলের এই জয়যাত্রায় কাতালান দলটি অবশ্য অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল নৈপুণ্যের বিচারে। কারণ ৪৩ খেলার এই রেকর্ডে বার্সেলোনা বেশি জয় পেয়েছিল। রিয়ালের ৩১ জয়ের বিপরীতে বার্সার অর্জন ৩৪টি। এমনকি বার্সেলোনা (১১১) পয়েন্টের হিসাবেও রিয়ালের (১০৪) চাইতে এগিয়ে।

 রিয়াল অবশ্য তাদের চাইতে এক ম্যাচ কম খেলেছে। আবার বার্সার (১৯) চাইতে বেশি ম্যাচে নিজেদের গোলপোস্টে বল যেতে দেয়নি রিয়াল (২৩)। স্পানিশ রাজধানীর দলটির আরেকটি কৃতিত্ব হচ্ছে একই সময়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চাইতে কম গোল (রিয়াল ২৭, বার্সা ৩৩) হজম করা। রিয়ালের এই অপরাজিত জয়ের ধারায় কোচ হিসেবে কেবল আনচেলোত্তিই আছেন ডাগআউটে। অপরদিকে ২০১৬-১৭ মৌসুমে  বার্সেলোনায় আর্নেস্তো ভালভার্দের পর দায়িত্বটি সামলেছিলেন লুইস এনরিকে। এখন দেখার পালা রিয়াল ৪৩ ম্যাচের লক্ষ্যে পৌছাতে পারে কিনা?

নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা যদি বিবেচনার বিষয় হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে রিয়াল এগিয়ে আছে। কেননা এই ৪২ ম্যাচে রিয়াল তিনবার বার্সেলোনার মুখোমুখি হয় এবং সবগুলোতেই জয়ী হয়। এর মধ্যে দুটি খেলা ছিল লা লিগায়। অপরটি স্পানিশ সুপার কাপের ফাইনালে।  

ইউরোপের শীর্ষ পাচ লিগের হিসেবে দীর্ঘতম অপরাজিত থাকার ধারায় বায়ার্নের পরেই আছে আর্সেনাল ও জুভেন্তাস। উভয় দলই অপরাজিত ছিল ৪৯ খেলা করে। এমনকি বার্সেলোনার  ৪৩ ম্যাচের রেকর্ডটির চাইতে একটি বেশি জিতেছে লিভারপুল। তারপরে অবস্থান রিয়াল (৪২) ও চেলসির (৪০)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here