রমনা পার্কে ফুলগুলোকে ফুটতে দেখছি অনেক বছর ধরে। কিন্তু এর নাম জানতাম না। গেল মাসে টানা কদিন টুকটাক বৃষ্টি হলো। এরপর মনে হলো এখন শীত শেষের বসন্তকালীন রমনা নিশ্চয় সতেজ সবুজ রুপেই দেখা দিবে। আর বসন্ত যেহেতু মিলবে কিছু ফুলের দেখাও। যেই ভাবা সেই কাজ। পার্কে ঢুকেই অনেক ফুলের সাথে দেখা মিললো সুগন্ধী বিচিত্র ফুল বিচিত্রা, যার ইংরেজি নাম ব্রুনফেলসিয়ার।
রমনা পার্ক কর্তৃপক্ষ হালে সেখানকার গাছগুলোর পাশে ফলক দিয়ে লিখে রেখেছে কোন গাছের কি নাম। এরকম একটা ফলক থেকেই জানলাম গাছটার নাম ব্রুনফেলসিয়া। বেগুনি, গোলাপি, সাদা এ ফুলটির বাংলা নামও আছে। নেট ঘেটেঘুটে দেখলাম এর বাংলা নাম দুটি- বিচিত্রা এবং সুষমা। আবার কারো কাছে এটার নাম আজ-কাল-পরশু। তবে বাংলায় এটা বিচিত্রা হিসেবেই দাড়িয়ে গেছে। ঝোপজাতীয় এ ফুল গাছটি সারা বছরই দিয়ে থাকে। তবে বর্ষায় বেশি ফুল ফোটে। রমনা ছাড়াও ঢাকা শহরের আরো কিছু সরকারী স্থাপনার আশেপাশেও এটাকে দেখা যায়।
ষোড়ক শতকে জার্মান ভেষজবিদ অটো ব্রুনফেলস (১৪৮৮-১৫৩৪) এর নাম অনুসারে প্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে (Brunfelsia) ব্রুনফেলসিয়া। কিন্তু বাংলায় এটিকে বিচিত্রা, সুষমা কিংবা আজ কাল পরশু কারা রাখলো তা এখনো জানতে পারিনি। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Brunfelsia pauciflora। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী এর প্রায় ৫০টি প্রজাতি রয়েছে।
রং বদলানোর স্বভাব এই ফুলটিকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ফুল ফোটার সময় রং থাকে লালচে বেগুনি। ধীরে ধীরে সে রং ফিকে হয়ে নীলচে গোলাপি রুপ ধারণ করে। সব শেষে হয় সাদা। তিন রঙের ফুলই এক সাথে গাছে থাকে বলে শোভা ছড়ায় চারপাশে। হয়ে ওঠে মনোলোভা। এ গাছ দুই থেকে আড়াই মিটার লম্বা হয়। ঝোপ বিস্তৃত হয় প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত। দীর্ঘজীবি এ গাছে সারা বছরই পাতা থাকে। দু:খজনক ব্যাপার হলো ব্রুনফেলসিয়ার ফুল শোভা ও সুগন্ধী হলেও ফল কিন্তু বিষাক্ত।
এখনো কোন ছাদে এ ফুল গাছটি চোখে পড়েনি। যদিও নেট ঘেটে জানা গেল টবেও হতে পারে বিচিত্র এই বিচিত্রা। গাছের ডাল কেটে কলমের মাধ্যমেও চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকেও চারা হয়। বাগানবিলাসের মতোই রোদেলা দিন পছন্দ এই ফুল গাছের। আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গাতেও হয় এই গাছ।