বিদায়ী বছরে ভাল করেছে পর্যটন খাত

0
100

বছরের শেষ দিকে এসে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করলেও বিদায়ী বছরে পর্যটন খাত ভাল করেছে। এমন মত খাতটির সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশে সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন খাত ভালো ব্যবসা করে। এ সময়ে আবহাওয়া বৃষ্টি বাদলহীন ও শুষ্ক থাকে বলে ভ্রমণ পিপাসুরা অনায়াসে ভ্রমণে বেরুতে পারেন। মোটা দাগে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রধান আকর্ষণ কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়ি কেন্দ্রগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতি বিরাজ করলেও ২০২৩ সালে এ দুটি অঞ্চলে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। পরিসংখ্যানের হিসেবে এটি ঘরোয়া পর্যটনের প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে দেশের অপর দুটি ভ্রমণ আকর্ষণ সিলেট ও কুয়াকাটায় এ বছরটিতে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত সমৃদ্ধ কক্সবাজারের অন্যতম বৃহৎ ও দামি পাঁচতারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ আগের বছরের মতো ২০২৩ সালেও গড়ে ৬০ শতাংশ রুম বুকিং পেয়েছে। হোটেলটির বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের পরিচালক আব্দুল আউয়াল ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের শঙ্কা ছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ মৌসুমে ব্যবসা কম হতে পারে। তাই অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও এত ভাল ব্যবসা করতে পেরে আমরা অবাক হয়েছি।’

তিনি এও জানান যে, তুলনামুলকভাবে ছোট হোটেলগুলো বড় হোটেলগুলোর চাইতে ভাল করেছে। কারণ এসব ছোট হোটেলগুলোয় কম খরচে রুম পাওয়া যায়। তাই তাদের প্রায় ১০০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। মাঝারি মানের এক হোটেলের কর্মকর্তাও জানান যে রাজনৈতিক অস্থিরতা স্বত্বেও তারা আগের বছরের মতোই ব্যবসা করতে পেরেছেন। তার মতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথ চালু হওয়ায় দেশের প্রধান এ পর্যটন গন্তব্যে পর্যটক বেড়েছে।

রাঙ্গামাটির সাজেক উপত্যকার এক হোটেল কর্মকর্তাও জানান দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ২০২৩ সালে তাদের ব্যবসায়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তার মতে, সাজেক এমন একটি প্রধান পর্যটন স্পট, যেখানে মানুষ সারা বছর ভ্রমণ করে। প্রাপ্ত তথ্য মতে সাজেক জুড়ে ১৩০টিরও বেশি হোটেল ও রিসোর্ট আছে। পর্যটক সমাগমের কারণে তাদের ব্যবসায় সমস্যা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান সন্তুস কুমার দেব পত্রিকাটিকে বলেন, গত এক দশকে তরুণ পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া শীতকালীন ছুটির জন্য দেশের প্রায় সব স্কুল ও কলেজ বর্তমানে বন্ধ। কিছু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পর্যটন ব্যবসা পুরোদমে চলমান থাকার আরেকটি কারণ এটি।

তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক ধর্মঘট ও অবরোধ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খুব দেখা যায়নি। আর ছুটির দিনেই মূলত মানুষ ঘুরতে পছন্দ করেন। তাই মানুষ অবাধে ভ্রমণ করতে পেরেছে। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটন নিয়ে নিজের গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে এই শিল্পের অবদান প্রায় ৩ শতাংশ এবং রাজস্ব আয় ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অবশ্য সিলেটের পরিস্থিতি অতটা ভাল নয়। জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টের ব্যবস্থাপক বদরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বর্তমানে পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে তারা মন্দা সময় পার করছেন। তার মতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুলত পর্যটকরা সিলেটে যাচ্ছেন না। তবে নির্বাচনের পর পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে কুয়াকাটায় ১৫ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ১৪০টি ছোট-বড় হোটেল থাকলেও গড় রুম বুকিংয়ে হার ৫০ শতাংশের নিচে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here