কক্সবাজার: পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য দেশের ভেতরে এখনো প্রধান আকর্ষণ পৃথীবির দীর্ঘ তম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। শুধু এ কারণেই কক্সবাজারের ভেতরে যাতায়াত থেকে শুরু করে থাকা খাওয়া সবকিছুতেই গলাকাটা দাম। ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ পর্যটন নগরীটিতে ঢাকা থেকে ট্রেন চালুর পর সেখানকার স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরের মুল শহরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইজিবাইক ও সিএনজিওয়ালাদের দৌরাত্ন দেখা দিয়েছিল। এখন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিআরটিসি বাস চালুর কারণে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের এই দুর্ভোগ দুর হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে।
ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয় তলাবিশিষ্ট এই রেলস্টেশনটি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে । শুরুতে ট্রেন চালুর পর যে উচ্ছাস দেখা দিয়েছিল তা ভোগান্তিতে পরিণত হয় অটোওয়ালাদের গলাকাটা ভাড়ার কারণে। সেটা অবশ্য এখনই দুর হয়ে যাবে না। কারণ বিআরটিসি আপাতত কেবল দুটি বাস চালু করেছে।
কক্সবাজারে ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার চালু হয়েছে বিআরটিসির দ্বিতল বাস সার্ভিস। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এটা অপ্রতুল। কারণ আপাতত দুটি বাস দিয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। এই বাসে আসন ৭৫টি করে। কিন্তু প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রাপ্ত তথ্যমতে বছরে ২০ লাখ মানুষ ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বালুকাবেলার শহরটিতে যান।
দেশে তিনদিনের ছুটি পড়লেই মানুষের ঢল নামে সেখানে। এই যেমন এখন সাপ্তাহিক ছুটির সাথে বড় দিন মিলিয়ে কক্সবাজারে হোটেল মোটেলে রুম খালি নেই। স্থানীয় এক পত্রিকার হিসেবে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের আকর্ষনীয় এ জেলায় সমুদ্রের ফেনিল জলরাশি, ঢেউয়ের গর্জন শুনতে সেখানে গেছেন তিন লাখ মানুষ। অনেক ভ্রমণ পিপাসুর সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর খবরও দিয়েছে দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলো। এরকম প্রেক্ষিতেই আপাতত সরকারী বাস চালু করা হলো। আশার কথা জেলা প্রশাসন ও বিআরটিসির স্থানীয় ম্যানেজার জানিয়েছেন যাত্রী চাহিদার প্রেক্ষিতে বাস আরো বাড়ানো হবে।
এই বাসে রেলওয়ে স্টেশন থেকে ডলফিন মোড়ে জনপ্রতি ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া সুগন্ধা মোড় পর্যন্ত ২০, লাবনী মোড় পর্যন্ত ২৫, হলিডে মোড় পর্যন্ত ৩০ এবং ঘুনগাছতলা পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা ভাড়া নেয়া হবে। এই বাসগুলোকে ট্যুরিস্ট বাস নাম দিলেও এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও চড়তে পারবেন। পৃথিবীর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে শহীদ সরণি মোড় বা ঘুনগাছতলা পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করবে বাসগুলো।
এই বাস চালুর আগে রেলওয়ে স্টেশন থেকে ডলফিন মোড় পর্যন্ত অটোওয়ালারা ২০০ টাকা ভাড়া দাবি করতো। বিআরটিসি বাসে একই দুরত্বের জন্য এখন ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। স্থানীয় পরিবহন মালিকদের কাছে পর্যটকদের জিম্মি হওয়ার এটা কেবল ছোট উদাহরন। তাই চালুর দিনেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল বাসগুলো। যাত্রীদের অভিমত, রাষ্ট্রীয় এমন সেবায় ধীরে ধীরে কমবে অটোচালকদের দৌরাত্ম্য।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মোহাম্মদ মাসুদ রানা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রেনের যাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে কারণেই সার্ভিসটি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে পর্যটকরা কক্সবাজার শহরে যাতায়াত করতে পারবেন। অপরদিকে বিআরটিসির ম্যানেজার বলেছেন, সাড়া পেলে বাসের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
এদিকে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভেও শিগগরিই বিআরটিসির ছাদখোলা বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে ।