দেশের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে তো বটেই, ভ্রমণ পাগল মানুষদের জন্যও আজ শুক্রবার ১ ডিসেম্বর ২০২৪ এক ঐতিহাসিক দিন। কেননা এদিন দেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ তীর্থ কক্সবাজারের সাথে রাজধানী ঢাকা তথা দেশের অন্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়ে গেল।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হলো বেলা সাড়ে ১২টার কিছু সময় পর। ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। আজকের ট্রেনে ২০টি বগিতে এক হাজার ২০ জন যাত্রী ভ্রমণ করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ এও জানিয়েছে যে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটির উদ্ধোধনী দিনের যাত্রা ছাড়াও ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
আপাতত দুটি ট্রেন যাতায়াত করবে ৪৮০ কিলোমিটার দুরত্বের এই রুটে। এটি শুধু থামবে চট্টগ্রাম ও ঢাকার এয়ারপোর্ট স্টেশনে। অপর ট্রেনটি, আজ রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর এই রুটের ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। তিনি সেদিন দুপুরে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের আইকনিক রেলস্টেশনসহ ১০১ কিলোমিটারের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এই ট্রেন যাত্রায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ঢাকা থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে যারা কক্সবাজার এসে নামবেন। কেননা পর্যটকেরা নিজেদের মালামাল রেলস্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয় তলাবিশিষ্ট এই রেলস্টেশনটি।
আইকনিক এ রেলস্টেশনে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা। দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান। যদিও এটির সব কাজ এখনো শেষ হয়নি।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে প্রথম ট্রেন যাত্রার সুবাদে আজ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এরপর নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে কড়া নিরাপত্তার মাঝে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সময় প্লাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস দুপুর সাড়ে ১২টায় ছেড়ে চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। সব মিলিয়ে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় দুই-তিন গুণ পর্যটক বাড়বে। এতে আরো সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প। রেল চালুর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করল কক্সবাজার। এর সুবাদে সমুদ্র শহরটির যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই রেল ঘিরে কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া রাখা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের এক হাজার ৫৯০ টাকা ও এসি বার্থের ভাড়া দুই হাজার ৩৮০ টাকা। ঢাকা থেকেও ভাড়া একই। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮৬ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা প্রত্যক্ষ করতে আসেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে। বর্তমান ট্রেনটিতে কোনো কেবিন সুবিধা নেই। এসি শোভন কোচে চেয়ার থাকবে পর্যাপ্ত। জানুয়ারি থেকে আরো কয়েকটি ট্রেন চালু হবে। তবে আপাতত লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে না।
এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।